কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের সড়কে সদর থানার মোড়ে ৪২ শতাংশ ভূমির উপর শ্রী শ্রী কালীবাড়ী মন্দির প্রতিষ্ঠিত।অষ্টাদশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে প্রায় দুইশত বছর র্পূবের কথা।কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের বুক চিরে বয়ে গেছে নরসুন্ধা নদী-সেই নরসুন্ধা নদীর কুল থেকে কিশোরগঞ্জ শহরের ১নং ওয়ার্ডের রাকুয়াইল এলাকায় জেলে সম্প্রদায়ের বড় জালে মাছ ধরার সময় একটি “কালীমাতা-বিগ্রহ” জালে ধরা দেয়।তখন জেলে সম্প্রদায়ের যৌথভাবে নরসুন্ধা নদীর তীরে র্বতমান কালীবাড়ির উত্তর দিকে একটি বৃক্ষ ছিল,সেই বৃক্ষের নীচে কালীমাতা-বিগ্রহটি প্রতিষ্ঠা করেন।তারপর যথারীতি হিন্দু সম্প্রদায় পুজা শুরু করেন।ব্রিটিশ আমলে তৎকালীন বিশিষ্ট-ব্যবসায়ী শ্রী কালাচাঁদ ঘোষ মহাশয় শ্রীশ্রী কালীবাড়ি মন্দির রক্ষনাবেক্ষনের আগ্রহ প্রকাশ করায় তিনি দীর্ঘদিন মন্দির সংস্কার ও রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্বপালন করেন।পরবর্তীকালে র্পযায়ক্রমে তৎকালীন মহাকুমা শহরের হিন্দুসম্প্রদায়ের বিশিষ্ট-ব্যাক্তি র্বগের সম্বন্বয়ে একটি সর্ম্পূন কালীমন্দির প্রতিষ্ঠা করেন।সেই সময় মোক্তার হোসেন উকিল(আইনজীবি),ডাক্তারমোহদয়গন সুর্দীঘদিন র্সাবিক ভাবে শ্রীশ্রী কালীমন্দিরের দায়িত্ব পালন করেন।১৯৭১ সনে তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্থানের বাংলার দামাল ছেলেরা দেশ-মাতৃকারটানে রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতাযুদ্ধে মেতে উঠে।সেই সময় হিন্দুসম্প্রদায় পুজা-পার্বণ করার জন্য শ্রী শ্রী কালীবাড়ি মন্দিরের দায়িত্ব অর্পন করেন বিশিষ্ট ব্যাক্তি শ্রী বেরতীমোহন চক্রর্বতী মহাশয়কে।

স্বাধীনতাযুদ্ধ চলাকালীন সময় এবং দেশ স্বাধীনের উষা-লগ্নে কালীমন্দিরে পূজা করা আবস্থায় শ্রী বেরতীমোহন চক্রর্বতী মহাশয়কে ধরে নিয়ে পাকহানাদার বাহিনী ধরে নিয়ে গিয়ে তাকে অতন্ত্য নির্মমভাবে হত্যা করে এবং কালীমাতা বিগ্রহটি লুটেনিয়ে যায়।তাছাড়া কালীমন্দিরে রক্ষিত সিন্ধুক ভেঙ্গে স্বর্ণ,রূপা ও নগদ অর্থ লুটে নিয়ে যায়।বাংলাদেশ স্বাধীন সর্বোভৌম রাষ্ট্রপ্রতিষ্টা হওয়ার পর কিশোরগঞ্জের শ্রী শ্রী কালীবাড়ি মন্দিরের প্রথম কমিটি গঠন হয়।১৯৭২-১৯৭৩সনে সভাপতি ছিলেন অধ্যাপক নরেন্দ্র চন্দ্র ঘোষ,সাধারন সম্পাদক ছিলেন শ্রী রমেশ নন্দী মোক্তার-মহাশয়।১৯৭৪-১৯৭৫ ইং সনে শ্রী শ্রী কালীবাড়ি মন্দির-কমিটির সভাপতি ছিলেন সাবেক কমিশনার শ্রী নরেন্দ্র রায় ঠাকুর।১৯৭৮-১৯৭৯সনে শ্রীশ্রী কালীবাড়ী মন্দির কমিটির সভাপতি ছিলেন শ্রী বাবু বিহারী চন্দ্র বিশ্বাস মোক্তার,সাধারণ সম্পাদক ছিলেন ডাঃজগৎ বন্ধু রায়(জে.বি.রায়)।সেই সময় বাবু নীলোৎপল কর(নীলুবাবু)-এর উদ্যোগে শ্রী শ্রী কালীবাড়ি সংস্কারের ব্যাপক উদ্যোগ নেয়া হয়।১৯৮০-১৯৮১ ই সনে তৎকালীন মহকুমা-প্রশাসক সভাপতি ছিলেন,সাধারন সম্পাদক ডাঃজগৎবন্ধু রায় দায়িত্ব পালন করেন।১৯৮৫-১৯৮৬ ইং সনে সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন কিশোরগঞ্জ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃমজিবুল হক চুন্নু,সাধারন সম্পাদক ছিলেন ডাঃজগৎবন্ধু রায়।সেই সময় অধ্যাপক সুনীল কুমার ঘোষকে আহ্বায়ক করে একটি সংবিধান প্রণয়ন কমিটি গঠন করা হয়।

উক্ত কমিটি একটি সংবিধান প্রনয়ন করে পরে সংবিধান মোতাবেক সাধারণ সদস্য সংগ্রহ করে। পরবর্তীকালে সদস্য বৃন্দের সমন্বয়ে সাধারন সভার মাধ্যমে সাংবিধানিক কামিটি গঠন করা হয়।১৯৯১-১৯৯২ ইং সনে সভাপতি ছিলেন এডভোকেট সমরেশ রায়,সাধারন সম্পাদক ছিলেন শ্রী বাবু মৃণাল কান্তি দত্ত।উল্লেখ,উক্ত কমিটি ২ বছর মেয়াদে ৪ বছর দায়িত্ব পালন করেন।সেই সময় শ্রীশ্রী রাধাকৃষ্ণ মন্দির,শ্রীশ্রী র্দুগা মন্দির,শ্রীশ্রী শম্ভুনাথ মন্দির টিনের মন্দির ঘর-ভেঙ্গে বিল্ডিং এ রুপান্তর করা হয় ও রচনাঘর র্পূনর্নিমান করা হয়।১৪০৭-১৪০৮ বাংলা সনে সভাপতি ছিলেন অধ্যাপক প্রাণেশ কুমার চৌধুরী,সাধারন সম্পাদক ছিলেন এডভোকেট অশোক সরকার।১৪১১-১৪১২ বাংলা সনে সভাপতি শ্রী মৃণাল কান্তি দত্ত,সাধারণ সম্পাদক গোপাল নন্দী দায়িত্বপালনকালে কালীবাড়ির ব্যাপক উন্নয়ন হয়।গত ৮ আগষ্ট ২০০২ ইং তারিখে শ্রীশ্রী কালীবাড়ি মার্কেটের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মনোনীত গৃহায়ন ও গণর্পূতমন্ত্রী মির্জা আব্বাস এবং সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন তৎকালীন জেলাপ্রশাসক মোঃমাহফুজুর রহমান,প্রকৌশলী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন বাবু ত্রিদীপ নারায়ন রায় ও বাবু সুজিত বসাক।

শ্রীশ্রী কালীবাড়ি মার্কেটের প্ল্যান ডিজাইন ৫ তলা বিশিষ্ট-এর মধ্যে ৪৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ৩ তলা র্পযন্ত মার্কেটের কাজ এগিয়ে চলছে ।বিগত ২৮ জুন ২০০৪ ইং তারিখে কিশোরগঞ্জের জেলাপ্রশাসক সি.এম ইউসুফ হোসাইন আনুষ্ঠানিকভাবে মার্কেটের শুভ উদ্বোধন করেন।এছাড়া ১৪০৪ বাংলা সন থেকে শ্রীশ্রী কালীবাড়ি মন্দির ও শ্রীশ্রী রাধাকৃষ্ণ মন্দিরে প্রতিদিন অন্নভোগ দেওয়ার রীতি চালু হয়।প্রতিদিন সন্ধ্যায় আরতী ও একাদশী তিথিতে পাঠকীর্তন নিয়মচালু হয়।উল্লেখ্য,যে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর শোলাকিয়া নিবাসী ডাঃসুরেশ চন্দ্র সেন(হোমিও)তার নিজব্যয়ে ভারত থেকে পাথরের কালামাতা বিগ্রহ পূনপ্রতিষ্ঠিত করে দেন।

১৪০৩ বাংলা সনে শ্রীশ্রী কালীবাড়ি মন্দির থেকে বিগ্রহটি চুরি হয়ে যায়।পরে মাটির কালীমূতি দিয়ে কিছুদিন র্পূজা-পার্বন চালু রাখা হয়।সেই সময় বড়-বাজারের বিশিষ্ঠ ব্যবসায়ী স্বর্গীয় নারায়ন চন্দ্র সাহা কৃর্তক কালীমাতা বিগ্রহটি পুনঃপ্রতিষ্টিত করা হয়।চন্দ্র চক্রর্বতী তার পরলোক গমনের পর অমলেন্দু চক্রবর্তী দায়িত্ব পালন করছেন।