গত মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অফ কমার্স (আইসিসি) ‘প্রবৃদ্ধির জন্য জ্বালানি’ শীর্ষক সম্মেলন করে। সম্মেলনে বক্তারা বলেন, বিদ্যমান প্রক্রিয়ায় বেসরকারি খাত বিদ্যুৎ উৎপাদন দ্রুত বৃদ্ধিতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে না। কারণ বর্তমানে বিদ্যুৎ প্রকল্পের অনুমোদন দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে পেতে হয়। প্রকল্পের অনুমোদন প্রক্রিয়ায় জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রতা থাকায় বেসরকারি উদ্যোক্তারা বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিনিয়োগে আগ্রহী হবে না বলে বক্তারা মনে করেন। তারা বিদ্যুৎ প্রকল্প সহজে অনুমোদন দেয়ার জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করেছেন।
বিদ্যুৎ প্রকল্পের অনুমোদন সহজ করা প্রসঙ্গে আইসিসির সুপারিশে যৌক্তিকতা রয়েছে। বিদ্যুতের লাগসই উন্নয়নে এটা ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে বলে মনে হয়। দেশে কোন বিদ্যুৎ প্রকল্প চালু করতে হলে অন্তত পাঁচটি কমিটির অনুমোদন লাগে। বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয় শুধু অনুমোদন নিতেই। এরপর সেই প্রকল্প শুরু করে বাস্তবায়ন করা পর্যন্ত অস্বাভাবিক সময়ের প্রয়োজন হয়। এ কারণে খোদ সরকারের পক্ষেই বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে ঝক্কি পোহাতে হয়। সেখানে বেসরকারি উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে আগ্রহী হবে না_ সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দেশে বিদ্যুৎ সঙ্কট চরমে উঠেছে। এই সঙ্কট থেকে দ্রুত উত্তরণ ঘটাতে চাইলে বিদ্যুৎ খাতে বেসরকারি বিনিয়োগের প্রয়োজন পড়বে। সরকার বিদ্যুৎ খাতে বেসরকারি বিনিয়োগ আশা করছে। এখাতে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য বিদেশে রোড শো করা হয়েছে। তাতে কেউ বিনিয়োগে আগ্রহী হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। এর কারণ প্রকল্প অনুমোদনে জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রতা। অহেতুক রোড শো করে কোটি কোটি টাকা খরচ না করে সরকার যদি প্রকল্প অনুমোদন প্রক্রিয়া সহজ করত তাহলে হয়তো এতদিনে বিদ্যুৎ প্রকল্পে কাঙ্ক্ষিত বেসরকারি বিনিয়োগ ঘটত।
নতুন বিনিয়োগে আকৃষ্ট করা, প্রবৃদ্ধি বাড়ানোসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য বিদ্যুৎ অপরিহার্য। দেশের ৫০ শতাংশ মানুষ এখনও বিদ্যুৎবঞ্চিত। যারা বিদ্যুৎ সেবার আওতায় রয়েছে তারাও উৎপাদন ঘাটতির কারণে নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ পায় না। এসব বিষয় বিবেচনা করে সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বিদ্যুৎ প্রকল্প অনুমোদনে ওয়ান স্টপ সার্ভিস প্রবর্তন করতে হবে। ঘাটে ঘাটে অনুমোদনের আনুষ্ঠানিকতা পরিবর্তন করা জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রকল্প অনুমোদনের ক্ষেত্রে একাধিক কমিটির পরিবর্তে একটি মাত্র সমন্বিত কমিটি করা যেতে পারে। এই কমিটি নির্ধারিত একটি সময়ের মধ্যে প্রকল্প অনুমোদন দেয়ার কাজ করবে। এতে বেসরকারি উদ্যোক্তারা সহজেই বিদ্যুৎ প্রকল্পের অনুমোদন পাবে। নতুন নতুন বিনিয়োগ আকৃষ্ট হবে। এ বিষয়ে সরকারকে দ্রুততার সঙ্গে কাজ করতে হবে। বিদ্যুৎ সঙ্কট যে চরম আকার ধারণ করেছে তাতে এ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সময় নষ্ট করার সুযোগ নেই।