ইতিহাস সংরক্ষিত হয় বইপত্রের পাতায়, কিংবা ক্যাসেটের ফিতায়। অথবা সংরক্ষিত হয় সময় পাড়ি দেওয়া মানুষের মস্তিষ্কের ভেতর। তবে ইতিহাসের একটি চমৎকার আধারের সন্ধান দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁদের মতে, গাছের কাণ্ডে সঞ্চিত হয় ইতিহাস, যা এসব কাণ্ড বিশ্লেষণে বের করে আনা সম্ভব।পুরনো সময়ের তথ্য পাওয়া যায় অনেক উৎস থেকেই। তবে সেগুলোর মধ্যে গাছের ব্যাপারটি একেবারেই ভিন্ন। কেননা, গাছ থেকে একই সঙ্গে পাওয়া যায় সময়ের হিসাব এবং জানা যায়, পেরিয়ে আসা সময়ের পরিবেশের খবরাখবরও।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, গাছের গুঁড়ি বিশ্লেষণ করে সেসব তথ্য জানা সম্ভব। কাল পরিক্রমায় গাছের কাণ্ডের কাঠামো ও চেহারায় পরিবর্তন আসে। এতে গুঁড়িতে যে বৃত্তাকার রেখাগুলো তৈরি হয়, সেগুলো বিশ্লেষণ করে গাছটির বয়স এবং এটি ওই সময় যে ধরনের পরিবেশ ও আবহাওয়া পার করে এসেছে সে সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। ফলে ওই সময়ের আবহাওয়া ও পরিবেশের প্রভাব মানুষের সমাজ ও রাজনৈতিক জীবনের ওপর কেমন ছিল তার আভাস পাওয়া যায়। অর্থাৎ এভাবে শুধু গাছের গুঁড়ি বিশ্লেষণ করেই একটি সময় মানুষের সমাজ ও জীবনধারা কেমন ছিল সে সম্পর্কে ধারণা লাভ করা সম্ভব। এমনকি এভাবে গত আড়াই হাজার বছর পর্যন্ত পুরনো কাঠের প্রায় ৯ হাজার তৈজসপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ইউরোপের ইতিহাস সম্পর্কে অনেক তথ্য পেয়েছেন একদল বিজ্ঞানী।

সায়েন্স জার্নালে সম্প্রতি এ বিষয়ে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের একজন সহ-লেখক সুইস ফেডারেল রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর ফরেস্ট, স্নো অ্যান্ড ল্যান্ডস্কেপের গবেষক উলফ বান্টজেন জানিয়েছেন, প্রত্নতাত্তি্বক সেসব নিদর্শন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর গত আড়াই হাজার বছরে ইউরোপের জলবায়ু, সভ্যতার বিকাশ, দুর্যোগ ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে অনেক তথ্য জানা সম্ভব হয়েছে। কী করে জলবায়ুর পরিবর্তন মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলেছে, সে সম্পর্কে অনেক স্পষ্ট ধারণা পাওয়া গেছে। বান্টজেন বলেন, কাঠের এ গুঁড়িগুলো একেকটি বিশাল তথ্যভাণ্ডার। পর্যাপ্ত তথ্য পেতে হলে কেবল যত বেশি সম্ভব_এ জিনিসটি পেতে হবে এবং কাণ্ডে প্রচুর রেখা থাকা চাই। তাহলেই সেসব বিশ্লেষণ করে জানা যাবে ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য।

বিবিসি নিউজঅনলাইন