ব্রাজিল-পর্তুগাল ম্যাচে ছিল হলুদ কার্ডের ছড়াছড়ি। এ ম্যাচে জেতেনি কেউ। জিতেছে মেক্সিকান রেফারি বেনিতো আর্চুন্দিয়ার বাঁশি। এ মেক্সিকান রেফারির হলুদ কার্ডের আতঙ্কে কোনো ধরনের ঝুঁকির মধ্যে না গিয়ে ম্যাচ শেষ করাটাকেই শ্রেয়জ্ঞান করেন দুই শিবিরের ফুটবলাররা। ফলও যা হওয়ার তাই। গতকাল ডারবানের মোজেস মাবিদা স্টেডিয়ামে গ্রুপ নির্ধারণী ম্যাচটি শেষ হয়েছে গোলশূন্যভাবে। এ ড্র সত্ত্বেও ডেথ গ্রুপ খ্যাত ‘জি’ গ্রুপ থেকে শীর্ষস্থান পেতে কোনো সমস্যা হয়নি পাঁচবারের বিশ্বজয়ী ব্রাজিলের। তিন ম্যাচ থেকে তাদের সংগ্রহ ৭ পয়েন্ট। আর সমান ম্যাচে ৫ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থান নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হলো ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর পর্তুগালকে। ব্রাজিলের মতো তারাও অপরাজিত থেকেই শেষ করল গ্রুপ পর্ব। এ ম্যাচকে ঘিরে ছিল আকাশছোঁয়া উত্তাপ। আগের ম্যাচে উত্তর কোরিয়াকে ৭-০ গোলে হারিয়ে অন্যরকম এক প্রত্যাশা জাগায় পর্তুগাল। আর আর্জেন্টিনার মতোই টানা তিন জয় নিয়ে মাথা উঁচু করে দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলার জন্য জানবাজি রেখে লড়বে তাদের প্রিয় দল এমনি সুখস্বপ্নে বিভোর ছিল ব্রাজিলিয়ান ভক্তরা। সব মিলিয়ে গ্রুপ পর্বের সেরা ম্যাচ দেখার অপেক্ষায় ছিল পুরো ফুটবলবিশ্ব। কিন্তু প্রত্যাশার সেই আশায় ছাই ঢেলে দেন মেক্সিকান রেফারি আর্চুন্দিয়া। ম্যাচে কার্ড দেখানোকেই একমাত্র দায়িত্ব হিসেবে নেন এ মেক্সিকান রেফারি। নামতা পড়ার মতো করে প্রথমার্ধেই সাত-সাতটি হলুদ কার্ড দেখান তিনি। ফল যা হওয়ার তাই। কেটে গেল ম্যাচের তাল-লয়-ছন্দ। ফুটবলাররা হয়ে উঠলেন ভীষণ সাবধানী। দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই একটা
নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে খেলে গেলেন ফুটবলাররা। কার্ডের ভয়ে যে দুই শিবিরই আচ্ছন্ন সেটা স্পষ্ট হয়ে গেল ফুটবলারদের শরীরী ভাষাতেই। লঘু পাপে গুরুদন্ড যে কাকে বলে সেটা হাতে-কলমে বুঝিয়ে দিলেন এ মেক্সিকান রেফারি। এক হলুদ কার্ড যেন দুইয়ে পরিণত না হয় এ নিয়ে ভীষণ দুশ্চিন্তায় ছিলেন দুই কোচ। ঝুঁকি না নিয়ে হলুদ কার্ড পাওয়া শিষ্যদের বেশ কয়েকজনকে মাঠ থেকে তুলে নেন দুই কোচই। প্রথমার্ধের শেষ মিনিটে হলুদ কার্ড পাওয়া মেলোর জায়গায় জোসুকে মাঠে নামান ডুঙ্গা। হলুদ কার্ড পাওয়া স্ট্রাইকার লুইস ফ্যাবিয়ানোকেও মাঠ থেকে তুলে নেন তিনি। একই কাজ করেন পর্তুগিজ কোচ কার্লোস কুইরোজও। দ্বিতীয়ার্ধে হলুদ কার্ড পাওয়া দুদা ও পেপেকে তুলে নেন এ পর্তুগিজ কোচ।
ম্যাচে ব্রাজিলিয়ান কোচ কার্লোস ডুঙ্গা পরীক্ষামূলক একটা দল নামালেন কি-না বড় হয়ে ওঠে এ প্রশ্নটিই। আগের ম্যাচে লাল কার্ডের কারণে এ ম্যাচে এমনিতেই ছিলেন না বিশ্বের অন্যতম সেরা প্লেমেকার কাকা। আর তাই সবাই ধরে নিয়েছিল আক্রমণভাগ ও মধ্যমাঠকে আরও বেশি শক্তিশালী করে কাকা না থাকার ঘাটতি পূরণ করবেন ব্রাজিলিয়ান কোচ। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, প্রথম একাদশের মধ্যমাঠ ও আক্রমণভাগের সবচেয়ে কার্যকর অস্ত্রগুলোকে বিশ্রামেই রাখেন ডুঙ্গা। আগের দুটি ম্যাচে দুর্দান্ত খেলা রবিনহো ও এলানো এ দু’জনকে ছাড়াই এ ম্যাচে প্রথম একাদশ সাজান তিনি। প্রথম দুই ম্যাচে সেরা একাদশে থাকা ফেলিপ মেলোই কেবল এ ম্যাচে শুরু থেকে খেলার সুযোগ পান। প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার মিনিট খানেক বাকি থাকতে তাকেও উঠিয়ে নেন ব্রাজিলিয়ান কোচ। ডিফেন্ডার দানি আলভেজ খেলেন মধ্যমাঠে। আর কাকার জায়গায় খেলানো হয় জুলিও ব্যাপতিস্তাকে।
অবশ্য এমন একটা মেকশিফট নিয়ে খেলেও প্রথমার্ধে বেশিরভাগ সময় বলের দখল নিজেদের অনুকূলেই রাখে ব্রাজিল। কিন্তু আগের দুটি ম্যাচে আক্রমণ ও মধ্যমাঠে যে সৃজনশীলতা ছিল তার অভাব ছিল প্রকট। শুরু থেকে মাঝে মধ্যে প্রতি আক্রমণে যাচ্ছিল রোনালদোরা। কিন্তু রেফারির বাঁশির শাসনে ম্যাচটা আর ম্যাচ থাকল না। হয়ে থাকল একটা নিষ্প্রাণ ফুটবল প্রদর্শনীর বিজ্ঞাপন।