হাওরাঞ্চলে মাছ ধরার টোপ হিসেবে ব্যবহারের জন্য ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে প্রতিদিন কয়েক মণ কেঁচো নিধন করা হচ্ছে। প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে জেনেও অভিনব উপায়ে কেঁচো ধরা চলছে। সম্প্রতি সরেজমিন উপজেলার সিংরইল ইউনিয়নের নারায়ণপুর গ্রামে দেখা গেছে, এক জাতীয় ফেনাযুক্ত তরল পদার্থ দিয়ে কেঁচো ধরছে অনেকে। স্যাঁতসেঁতে, গোবর বা আবর্জনা ফেলা হয় এমন স্থানে ওই তরল পদার্থ ছিটিয়ে দেওয়া হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই মাটির নিচ থেকে কেঁচো বের হয়ে আসতে থাকে। শিকারিরা এসব কেঁচো পাত্রে জড়ো করে বড় খাঁচায় ভর্তি করে। পরে খাঁচাভর্তি কেঁচো হাওরাঞ্চলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে বিশেষ এক ধরনের বড়শির টোপ হিসেবে কেঁচো ব্যবহার করা হয়।

কথা হয় কেঁচো ধরতে আসা গাংগাটিয়া গ্রামের হেলাল উদ্দিনের (৩০) সঙ্গে। তিনি জানান, এ পদ্ধতিতে বিভিন্ন গ্রাম থেকে তিন বছর ধরে কেঁচো ধরছেন তিনি। কী ধরনের ওষুধ ব্যবহার করেন—জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি রিটা ফল ভেজানো পানি। কেঁচো শিকারের আগের দিন রিটা ফল পানিতে ভিজিয়ে রেখে দেন। পরের দিন ওই পানি কেঁচো বসবাসের স্থানের ওপর ছিটিয়ে দিলে কেঁচো মাটির নিচ থেকে বেরিয়ে আসে।’ একেকজন শিকারি প্রতিদিন পাঁচ-ছয় শ কেঁচো ধরতে পারে।

একই গ্রামের দুলাল মিয়া (৩২) জানান, অন্যান্য দলের মতো তাঁদের দলে পাঁচজন লোক আছেন। প্রতিদিন কেঁচো ধরে সন্ধ্যায় সবাই স্থানীয় বাকচান্দা বাজারে জড়ো হন। এরপর খাঁচাভর্তি কেঁচো ভ্যানগাড়িতে করে করিমগঞ্জের মরিচখালি এলাকায় নিয়ে যান। সেখান থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে কিশোরগঞ্জের ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রামসহ আশপাশের হাওরাঞ্চলে নিয়ে যাওয়া হয়।

নান্দাইল ও আশপাশের এলাকা থেকে প্রতিদিন প্রায় ছয়-সাত মণ কেঁচো ধরে হাওরাঞ্চলে পাঠানো হচ্ছে বলে দুলাল মিয়া জানান। তিনি আরও জানান, হাওরাঞ্চলে এসব কেঁচো বিশেষ এক ধরনের ‘লার বড়শিতে’ (একটি লারে কয়েক শ বড়শি থাকে) টোপ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। নান্দাইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুস সাত্তার বলেন, কেঁচো জমির মাটি নরম রাখে। এতে জমির উর্বরতা বাড়ে। প্রকৃতির লাঙল হিসেবে পরিচিত কেঁচো ধ্বংস হলে মাটির উর্বরতা কমে যাওয়ার পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই নির্বিচার কেঁচো শিকার বন্ধ হওয়া উচিত।