সমাজে খুব কম মানুষই আছেন যাঁরা সামাজিক দায়বদ্ধতা আর বিবেকের তাড়নায় মানবসেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেন। কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের নিয়ামতপুর ইউনিয়নের রৌহা গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারের সন্তান আলহাজ এরশাদ উদ্দিন। যিনি ছোটবেলা থেকেই অভাবের সঙ্গে লড়ে বড় হয়েছেন। কলেজ জীবন পার করে তিনি ঢাকায় একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে চাকরির কিছুদিন পর সামান্য কিছু পুঁজি আর সততা দিয়ে নিজেই আমদানি-রফতানি ব্যবসা শুরু“ করেন। ধীরে ধীরে সেই ব্যবসার মাধ্যমে এখন সমাজে প্রতিষ্ঠিত হলেও পেছনের জীবনের অভাবকে তিনি ভুলে যাননি। তাই দেশের সবচেয়ে বড় স্টীল মিল স্কেল এক্সপোর্টার হয়েও একান্তই সাধারণভাবে জীবনযাপন করে চলেছেন। পাশাপাশি একযুগ ধরে তিনি সমাজের হতদরিদ্র মানুষের সেবা করে যাচ্ছেন। ২০০০ সাল থেকে তিনি এলাকার ৩৫ বয়স্ক ও বিধবার মাঝে প্রথম বিধবা ও বয়স্ক ভাতা কার্যক্রম শুরু“ করেন। প্রতি ৩ মাস পরপর এলাকায় গিয়ে এসব হতদরিদ্রের মাঝে তিনি ৪৫০ টাকা করে বিতরণ করছেন।

এরপর তিনি এরশাদ উদ্দিন মানবকল্যাণ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করে এর প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে থেকে এসব সামজিক কার্যক্রম আরও বৃহত পরিসরে চালিয়ে যাচ্ছেন। নিজের ব্যবসার মাধ্যমে অর্জিত টাকার একটি বিপুল অংশ তিনি এ কার্যক্রমে ব্যয় করে চলেছেন। ইতোমধ্যে তিনি কৃতী শিক্ষার্থী ও মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা প্রদান, অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে সেলাই মেশিন প্রদান, হাওড়ের কৃষকদের বিশুদ্ধ পানির জন্য নলকূপ প্রদান, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের চিকিৎসাভাতা দিয়েছেন। করিগঞ্জে শতভাগ স্যানিটেশন ব্যবস্থা, রৌহা গ্রামে স্বেচ্ছাশ্রমে ‘স্বপ্নের সেত’ু নির্মাণসহ কয়েকটি রাস্তা নির্মাণ করেন। ২০০৯ সালের আগাম বন্যায় করিমগঞ্জের সুতারপাড়া বিশাল হাওড় তলিয়ে যাওয়ায় স্থানীয় কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাদের দুরবস্থার কথা জেনে ঢাকা থেকে ফিরে তিনি এলাকায় কয়েক শ’ শ্রমিক নিয়ে রাঙ্গামাটিয়া ও পাঙ্গাইয়া খালের ওপর দুটি ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করেন। পাশাপাশি ৬০ গৃহহীনের প্রত্যেককে ঢেউটিন ও গৃহনির্মাণ উপকরণ প্রদান করেন। অভুক্তদের ভাল খাবার খাওয়ানোর লক্ষ্যে তিনি গত বছরের প্রথমদিকে নোয়াবাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এলাকার গণমানুষের জন্য ফ্রি খাবারের ব্যবস্থা করেন। এতে প্রায় ১০ হাজার লোকের সমাগম ঘটে।

বাংলাদেশ স্টীল মিল স্কেল রি-প্রসেস এ্যান্ড এক্সপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ও জেলা কৃষক লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আলহাজ এরশাদ উদ্দিন গত ৭ বছর ধরে করিমগঞ্জ ও তাড়াইলের প্রায় ৬ হাজার হতদরিদ্র নারী-পুরুষের মাঝে শাড়ি ও লুঙ্গি বিতরণ করেন। বস্ত্র নিতে দরিদ্রদের যাতে সমস্যা না হয় সে জন্য তিনি এসব শাড়ি-লুঙ্গি ট্রাকে বোঝাই করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে নিজ হাতে বিতরণ করেন। এসব সামগ্রী বিতরণের সময় তিনি তাদের সন্তানদের পড়াশোনা করে শিক্ষিত হিসেবে সমাজে গড়ে তোলার পরামর্শ দেন। তিনি প্রতিবছর বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ, মক্তব, মাজার ও মন্দিরের উন্নয়নের জন্য বিপুল অংকের অনুদান দিয়ে থাকেন। এ পর্যন্ত তিনি প্রায় ২ শতাধিক মসজিদ সংস্কারের জন্য প্রায় ৩ কোটি টাকার ওপর বরাদ্দ দিয়েছেন। এছাড়াও করিমগঞ্জ-তাড়াইলের প্রায় সকল মন্দিরে আর্থিক অনুদান দিয়েছেন।

দরিদ্র রোগীদের চিকিৎসার্থে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিশেষ করে করিমগঞ্জ-তাড়াইলের রোগীদের খোঁজ নেয়ার জন্য তিনি তাঁর ঢাকার অফিসে একজনকে নিয়োগ দিয়েছেন। ওই কর্মকর্তা কেবল হাসপাতালে গিয়ে রোগী ঠিক আছে কি-না তা জানানোর পর তিনি এসব হাসপাতাল গিয়ে নগদ অর্থ দিয়ে সহায়তা করছেন। এ পর্যন্ত কয়েক শ’ রোগীর মাঝে ২/৩ হাজার টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত দিয়েছেন। তাঁর এসব মানবকল্যাণমূলক কাজে স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার লোকজন উপকৃত হচ্ছেন। অনেকে জানান, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি না হয়েও তিনি ব্যক্তি উদ্যোগে সাধারণ মানুষের উপকারে যা করছেন বিশেষ করে হতদরিদ্র ও নিঃস্ব লোকদের সেবায় যেভাবে আত্মনিয়োগ করে যাচ্ছেন তা অতুলনীয়।

লিখেছেনঃ মাজহার মান্না, কিশোরগঞ্জ