দেশের চা শিল্পকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি শ্রীমঙ্গলে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে একটি চা জাদুঘর। সেই ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু করে চা শিল্পের বিশেষ স্মৃতিচিহ্ন স্থান পেয়েছে এই জাদুঘরে। জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ চা বোর্ড পরিচালিত টি রিসোর্টে। টি রিসোর্টটি শ্রীমঙ্গল শহর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সড়কের পাশে চা বাগান ঘেরা মনোমুগ্ধকর এক নির্জন পরিবেশে অবস্থিত।টি রিসোর্টের অফিসার ইনচার্জ একেএম রফিকুল হক জানান, প্রায় দেড়শ’ বছরের চা শিল্পের প্রাচীন ইতিহাসের টুকরো টুকরো অংশ রয়েছে এখানে। দেশের চা বাগানগুলোতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা প্রাচীন ঐতিহ্যের নিদর্শনগুলোকে সংরক্ষণ করে নতুন প্রজন্মের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে বাংলাদেশ চা বোর্ড শ্রীমঙ্গলে একটি চা জাদুঘর প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করে।

ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত চা বাগানগুলোতে ব্যবহৃত প্রায় ৫০টি দুর্লভ পুরনো আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রী সংগ্রহ করে এই জাদুঘরে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে স্বাধীনতা-পূর্ব সময়ে তৎকালীন পাকিস্তান চা বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনকালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যবহৃত ঐতিহাসিক চেয়ার-টেবিলটি এখানে সংরক্ষিত আছে। জাদুঘরে স্থান পাওয়া দুর্লভ অন্যান্য সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে_ ব্রিটিশ আমলের টারবাইন পাম্প, কাঠ-পাথরে রূপান্তরিত ফসিল, সার্ভে চেইন, হস্তচালিত নলকূপ, লিফট পাম্প, লোহার লাঙ্গলের অংশ, কেরোসিনচালিত ফ্রিজ, লোহার টেবিল, পানির ফিল্টার, সিরামিক জার, বৈদ্যুতিক পাখা, প্রথম সময়ের কম্পিউটার, পুরনো টেলিফোন সেট, টাইপ রাইটার, প্রাচীন পিএইচ মিটার, দেয়াল ঘড়ি, প্রুনিং দা, কাটা কোদাল, ড্রায়ারের অংশ, প্রাচীন মুদ্রা, পল্গান্টিং হো, রুপার মুদ্রা, তামা, ঘটি, বেতারযন্ত্র, রিং কোদাল, লোহার পাপস, কম্পাস, চয়নযন্ত্র, খুন্তি, লোহার বাথটাব, লেদ মেশিন, ভগ্ন উড়োজাহাজের খণ্ডাংশ, ট্রলি ও রেললাইন, ড্রেসিং টেবিল, কষ্টিপাথরের পেল্গট, রুপার গহনা, মাদুলিসহ আরও অনেক রকমের নিদর্শন।

প্রাচীন নিদর্শনগুলোর মধ্যে দেওড়াছড়া চা বাগান থেকে হস্তচালিত নলকূপ ও বৈদ্যুতিক পাখা, লাল্লাখাল চা বাগান থেকে গাছের ফসিল, কোদালা চা বাগান থেকে ঘড়ি, পল্গান্টিং হো, কাটা কোদাল, লোহার বাথটাব, গাড়ির চেসিস ও কেরোসিনের ফ্রিজ, কর্ণফুলী চা বাগান থেকে টাইপ রাইটার, প্রাচীন মুদ্রা, কষ্টিপাথরের পেল্গট, প্রুনিং নাইফ, ইলেকট্রিক ফ্যান, সার্ভে চেইন, ওয়াটার ফিল্টার ও রেডিও, বারমাসিয়া চা বাগান থেকে লেদ মেশিন ও তীর-ধনুক, লালচান্দ চা বাগান থেকে সিরামিক ঝাড় ও ড্রায়ারের অংশ, রাজনগর চা বাগান থেকে পুরনো মুদ্রা ও রিং কোদাল, কুলাউড়া থেকে বিধ্বস্ত বিমানের অংশ এবং লস্করপুর চা বাগান থেকে মাদুলিছড়া সংগ্রহ করা হয়।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৭ সালের ৪ জুন থেকে ১৯৫৮ সালের ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত তদানীন্তন পাকিস্তান চা বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। তদানীন্তন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার স্মারক নম্বর ৩৩৫/৯১৩/৫৬-সিপি, তারিখ ৪ জুন ১৯৫৭ মূলে তাকে চেয়ারম্যান করে ১৩ সদস্যের বোর্ড গঠন করে।

-সমকাল