কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা অষ্টগ্রামের ধলেশ্বরী ও মেঘনা নদীর তীরে সাত কিলোমিটারের মধ্যে ১৪টি ইটভাটা রয়েছে। পরিবেশ নীতিমালা, ইট পোড়ানো আইন না মেনে ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অমান্য করে এসব ইটভাটা নির্মিত হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। লোকালয়সংলগ্ন বোরো ধানের জমিতে এসব ভাটায় অবাধে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। অষ্টগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সেবাস্টিন রেমা জানান, হাওরের কাস্তুল, বাঙ্গালপাড়া ও দেওঘর ইউনিয়নের ধলেশ্বরী ও মেঘনা নদীর পাড়ে লাইন ধরে ইটভাটা নির্মাণের ফলে হাওরের জীববৈচিত্র্যের ক্ষতিসহ প্রাকৃতিক পরিবেশ মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।

ইউএনও কার্যালয়ের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, অধিকাংশ ইটভাটা লোকালয়ের ৩০০ গজ থেকে সর্বোচ্চ এক কিলোমিটারের মধ্যে পড়েছে। ১৯৯২ সালের ভূমি মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইন-২০০১ (সংশোধিত) অনুযায়ী, কৃষি জমিতে ইটভাটা নির্মাণ করা যাবে না। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কিশোরগঞ্জের উপপরিচালক নির্মল কুমার সাহা বলেন, ইট তৈরিতে মাটি সংগ্রহ করা হয় বোরো জমির উপরিভাগ (টপ সয়েল) থেকে। এতে জমির উৎপাদনক্ষমতা মারাত্মকভাবে হ্রাস পায়।

কাস্তুল গ্রামের কৃষক লোকমান মিয়াসহ একাধিক গ্রামবাসী জানান, ইটভাটা তৈরির ফলে গ্রামের মানুষের শ্বাসকষ্ট, চর্ম ও এলার্জিজনিত সমস্যা বেড়ে গেছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, ১৪টি ইটভাটার মধ্যে আটটির সরকারি অনুমোদন রয়েছে। বাকি ছয়টির কোনো অনুমোদন নেই। অনুমোদনহীন ছয়টির মধ্যে পাঁচটিতে নিষিদ্ধ ড্রাম চিমনি ব্যবহার করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে রিফাত ব্রিকস, আয়শা, এনএইচবি, সাদিয়া, জোনাকী, ভাই ভাই, ফাইভ স্টার ও আতা ব্রিকস অনুমোদন নিয়েছে। এসএডি ব্রিকস, লাবণ্য, ইমন, আবদুল্লাহপুর, যমুনা ও লাকী ব্রিকসসহ ছয়টি ইটভাটা ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে। অনুমোদনহীন এই ছয় ইটভাটার মধ্যে প্রথম পাঁচটি নিষিদ্ধ ড্রাম চিমনি ব্যবহার করছে বলে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন। তবে ১৪টির মধ্যে অধিকাংশ ইটভাটায়ই কাঠ পোড়ানো হচ্ছে।

লাকী ব্রিকসের মালিক গোলাপ মিয়া দাবি করেন, তিনি ছাড়পত্র নিয়েই ইটভাটা করেছেন। কিন্তু তিনি কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। দেওঘর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. গিয়াসউদ্দিন জানান, পরিবেশ আইন অমান্য করে যেসব ইটভাটা নির্মাণ করা হয়েছে, সেগুলোর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি।  অষ্টগ্রামের ইউএনও সেবাস্টিন রেমা বলেন, ‘এখানে যোগদানের সময় পাঁচ-সাতটি ইটভাটা ছিল। দুই বছরে ১৪টি দাঁড়িয়েছে। এত ইটভাটার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। প্রথমে পরিবেশ অধিদপ্তরকে অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। বৈধভাবে ইট পোড়ানো ও লাইসেন্স নবায়ন আছে কি না এগুলো দেখার দায়িত্ব আমার। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেব।’

পরিবেশ অধিদপ্তর ঢাকা অঞ্চলের পরিচালক আবুল মনসুর বলেন, ‘আমরা শুধু পরিবেশ ছাড়পত্র দিই। ট্রেড লাইসেন্স ও অন্যান্য বিষয় দেখে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জেলা প্রশাসন লাইসেন্স দেয়। হাওরের বিষয়টি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। লিখিত অভিযোগ পেলে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক সিদ্দিকুর রহমান জানান, সরকারি আইন ও নিয়মানুযায়ী ইটভাটাগুলো নির্মিত হয়েছে কি না তা সরেজমিনে পরিদর্শন করে, সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। লিখেছেনঃ সাইফুল হক মোল্লা